মীর কাসেম আলী তাঁর ‘নিখোঁজ’ ছেলেকে ছাড়া প্রাণভিক্ষার আবেদন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না। আজ বুধবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দী মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করতে বেলা পৌনে তিনটার দিকে কারাগারে যান তাঁর পরিবারের নয় সদস্য।
কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২-এর কারাধ্যক্ষ নাশির আহমেদ এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এই জামায়াত নেতার সঙ্গে দেখা করেন স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন, দুই মেয়ে তাহেরা তাসনীম ও সুমাইয়া রাবেয়া, দুই পুত্রবধূ শাহেদা তাহমিদা আক্তার ও তাহমিনা আক্তার, ভাতিজা মো. হাসান জামান ও তিন শিশু।
বেলা ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে সাক্ষাৎ শেষে বের হয়ে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী বলেন, ২২ দিন আগে সাদাপোশাকধারী লোকজন তাঁদের ছেলে ব্যারিস্টার আহম্মেদ বিন কাসেমকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। ছেলে তাঁর বাবার আইনজীবীও। পারিবারিক যেকোনো পরামর্শের জন্য তাঁকে প্রয়োজন। ছেলেকে ছাড়া তাই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না তাঁর স্বামী। পরিবারও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না।
কারাধ্যক্ষ জানিয়েছেন, পরিবারের সদস্যরা নিজ থেকে মীর কাসেমের সঙ্গে দেখা করতে কাশিমপুর কারাগারে আসেন। কাশিমপুর কারাগারের কোনো কর্তৃপক্ষ তাঁদের ডাকেনি।
মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেমের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দেন। এর পরপরই ৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের সব ধরনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে তাঁর ফাঁসি কাশিমপুর, না কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর হবে, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক লে. কর্নেল ইকবাল হাসান। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে।
মীর কাসেম আলী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ বন্দী রয়েছেন। ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ হওয়ার রায় আজ সকালে তাঁকে পড়ে শোনানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাশিমপুর কারাগার-২-এর কারা তত্ত্বাবধায়ক প্রশান্ত কুমার বণিক।
গতকাল সকালে রায় ঘোষণার পর বিকেলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। বিকেলেই রায়ের অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যায়। সেখান থেকে রায়ের অনুলিপি কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। রিভিউ খারিজের মধ্য দিয়ে মীর কাসেমের আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপের ইতি ঘটেছে। এখন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। এই সুযোগ তিনি নেবেন কি না, তা তাঁর আইনজীবী বা পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
পাঠকের মতামত